Follow Us:

তওবা আত্মাকে পবিত্র করে

তওবা আত্মাকে পবিত্র করে

Published by Ali Azam

তওবা আত্মাকে পবিত্র করে

মহান আল্লাহ কোরআনে বলেন, 'আমি সৃষ্টি করেছি জিন আর মানুষকে এজন্য না যে, যে, তাঁরা তার আমারই ইবাদত করবে।' (সূরা জারিয়াত। ৫৬)। স্রষ্টা মানুষকে যে উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছেন, মানুষের তো উচিত সে উদ্দেশ্যই পুরণ করা। তাহলে মানুষ গোনাহের কাজে লিপ্ত। আসলে সিরাতুল মুস্তাকিমের পথে চলতে গিয়ে মানুষ দুইটি প্রধান বাধার সম্মুখীন হয়। নফসে আম্মারা ও বিতাড়িত শয়তান। এদের প্ররোচনায় মানুষ বিপথে চালিত ত হয়, গোনাহ করে ফেলে। আল্লাহ তায়ালা মানুষের আত্মাকে নিষ্পাপ ও পবিত্র অবস্থায়ই পৃথিবীতে প্রেরণ করেন। আত্মার ও হয় কেন? এ পবিত্র ও নিষ্পাপ অবস্থা সোনাহের কালিমা দ্বারা বিনষ্ট হয়। তওবার অনুশোচনা ও রোনাজারির অশ্রু আত্মার এ কালিমা বিদূরিত করে, আত্মা পবিত্র হয়।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আমি শুনেছি রাসুল (সা.) বলেছেন, 'ওই সত্তার কসম। যার হাতে আমার প্রাণ, যদি তোমরা মোটেও গোনাহ না করো, তাহলে আল্লাহ তোমাদের অস্তিত্ব বিলীন করে দেবেন এবং এমন লোকদের সৃষ্টি করবেন, যারা গোনাহ করবে এবং এস্তেগফারও করবে। অতঃপর আল্লাহ তাদের ক্ষমা করে দেবেন।' এখান থেকে বোঝা যায়, আমাদের সৃষ্টির পেছনে মহান আল্লাহর একটি অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য রয়েছে। শুধু ইবাদত-বন্দেগির জন্য তো মানুষ সৃষ্টির প্রয়োজন ছিল না, ফেরেশতারাই যথেষ্ট ছিল। মূলত মানুষকে আল্লাহ দুইটি বিপরীতমুখী যোগ্যতা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। পজেটিভ-নেগেটিভ, ইতিবাচক-নেতিবাচক, অর্থাৎ ইবাদত-বন্দেগির যোগ্যতা ও পাপ কাজের যোগ্যতা। মানুষ যদি ইবাদত ছেড়ে দিয়ে বিপথগামী হয় এবং গোনাহ করে ফেলে তাহলে তার জন্য রয়েছে এস্তেগফার ও তওবার পথ। বান্দা যদি গোনাহ না করে তাহলে মহান আল্লাহর গাফফার, গফুর, রহমান, রহিম ইত্যাদি গুণের প্রকাশ ঘটবে কীভাবে? তওবা দ্বারা বান্দা এমন মর্যাদায় পৌঁছতে পারে, গোনাহ বর্জন বা নেক আমল দিয়ে যেখানে পৌঁছতে পারে না। যেমন, হজরত মুয়াবিয়া (রা.) সম্পর্কে হজরত থানভি (রহ.) একটি ঘটনা লিখেছেন, হজরত মুয়াবিয়া (রা.) তাহাজ্জুদের উদ্দেশ্যে প্রতি রাতে উঠতেন। একদিন তার ঘুম ভাঙেনি। ফলে তিনি সেদিন তাহাজ্জুদ পড়তে পারেননি। এজন্য সারা দিন তিনি কান্নাকাটি। করলেন, আল্লাহর দরবারে তওবা-এস্তেগফার করলেন, মিনতি স্বরে বললেন, হে আল্লাহ। আমার তাহাজ্জুদ ছুটে গেছে আমি লজ্জিত, অনুতপ্ত!

পরবর্তী রাতে যখন ঘুমালেন, তখন তাহাজ্জুদের। সময় এক ব্যক্তি এসে তাকে জাগিয়ে তুলল তিনি দেখলেন, এক অপরিচিত লোক তাকে জাগিয়ে পাশেই দাঁড়িয়ে আছে। মুয়াবিয়া (রা.) তার পরিচয় জিজ্ঞেস করলেন। সে উত্তর দিল, আমি ইবলিস। উত্তর শুনে মুয়াবিয়া (রা.) বললেন, যদি তুমি ইবলিস হও তবে তাহাজ্জুদের জন্য আমাকে জাগালে কেন? তোমার মতলবটা কী? ইবলিস উত্তর দিল, আগে উঠুন তাহাজ্জুদ পড়ে নিন। মুয়াবিয়া (রা.) বললেন, বাহ। তোমার কাজ তো তাহাজ্জুদ থেকে বাধা দেয়া, অথচ আজ এর বিপরীত করলে, এটা তুমি কোথেকে শিখলে? সে উত্তর দিল, আসল ব্যাপার হচ্ছে, গত রাতে তাহাজ্জুদ থেকে আপনাকে বিরত রেখেছিলাম, তাহাজ্জুদ কাজা করে দিয়েছিলাম। কিন্তু আপনিই কী কম করলেন? সারাদিন কান্নাকাটি করলেন, তওবা-এস্তেগফার করলেন, ফলে আমার চতুরতা বিফল হলো। আপনার মর্যাদা এত বেশি বেড়ে গেল যে, তাহাজ্জুদ পড়লে সেই মর্যাদা পেতেন না। এজন্য আপনার তাহাজ্জুদ পড়াটাই আমার জন্য ভালো। তাই আজ আমি নিজেই জাগাতে এসেছি, যেন আপনার শান এভাবে বাড়তে না পারে। এ ঘটনায় প্রতীয়মান হলো, তওবা-এস্তেগফার মানুষকে অনেক মর্যাদাশীল করে। ইবাদতের দ্বারাও অনেক সময় সে মর্যাদায় পৌছ্য যায় না। গোনাহ করব আবার তওবা-এস্তেগফারও কদরব এমন ধারণাও রাখা যাবে না। গোনাহ থেকে দূরে থাকা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরজ। এর পরও যদি গোনাহ হয়ে যায় তাহলে হতাশায় না পড়ে তওবা করতে হবে। মহান আল্লাহ কোরআনে বলেছেন, 'অবশ্যই আল্লাহ তাদের তওবা কবুল করবেন যারা ভুলবশত মন্দ কাজ করে, অতঃপর অনতিবিলম্বে তওবা করে। এরাই তারা যাদের তওবা আল্লাহ কবুল করেন। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।' (সূরা আন-নিসা: ১৭)। পশ্চিম দিকে সূর্য ওঠার আগ পর্যন্ত বান্দার জন্য তওবার দরজা খোলা রয়েছে। তওবা কবুলের ইমার্জেন্সি বিভাগ বান্দার জন্য সবসময় খোলা থাকে, কখনও বন্ধ হয় না। বর্ণিত আছে যে, একবার এক ব্যক্তি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) কে প্রশ্ন করলেন, আমি একটি অপরাধ করেছি, এখন যদি আমি তওবা করি তবে আমার। তওবা কবুল হবে কি? একথা শোনার পর প্রথমে তিনি লোকটির দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। কিছুক্ষণ পর ফের লোকটির দিকে তাকিয়ে তাকে অশ্রুসজল দেখতে পেয়ে বললেন, 'জান্নাতের আটটি দরজা আছে। দরজাগুলো খোলে এবং বন্ধ হয়। কিন্তু তওবার দরজা কখনও বন্ধ হয় না। সেখানে একজন ফেরেশতা নিয়োজিত আছে আছে। তুমি আমল করতে থাক, নিরাশ হবে ধনা।' অন্যত্র নবী করিম (সা.) বলেছেন, হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ বলেন, 'গোনাহগারদের কান্নাকাটি, বেদনাভরা আর্জি, কাকুতি-মিনতি আমার কাছে তাসবিহ পাঠকারীদের সুবহানাল্লাহ সুবহানাল্লাহর আওয়াজ থেকে অধিক প্রিয়।'

কোরআনে আল্লাহ মোমিনদের তওবায়ে নাসুহা অর্থাৎ প্রকৃত তওবা করতে বলেছেন। তওবায়ে নাসুহা বা বা প্রকৃত প্রকৃত তওবার শর্ত তিনটি। এ তিনটি শর্তের কোনো একটি পাওয়া না গেলে তা প্রকৃত তওবা হবে না। শর্ত তিনটি হলো, মুখে ক্ষমা প্রার্থনা করা, কৃত গোনাহের জন্য লজ্জিত হওয়া, ভবিষ্যতে এ গোনাহ না। হ না করার অঙ্গীকার করা। তওবার ক্ষেত্রে এ তিনটি শর্তের দিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। নবী করিম (সা.) নিজেও দিনে-রাতে ১০০ বার তওবা করতেন। যার অগ্র ও পশ্চাত্রের সব ভুলভ্রান্তি আল্লাহ মাফ করে দিয়েছেন তার অবস্থা যদি এই হয়, তাহলে। আমাদের মতো গোনাহগারদের দৈনিক কতবার তওবা করা উচিত?