Published by Ali Azam
আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, 'প্রয়োজন পরিমাণ দ্বীনি জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর ফরজ।' এ ফরজ নামাজ রোজার মতো অর্থাৎ ফরজে আইন, প্রত্যেককেই পালন করতে হবে। মানুষ দুনিয়ায় পরিপূর্ণতা অর্জন করে মূলত দুইটি জিনিসের মাধ্যমে। একটি এলম অপরটি আমল। মর্যাদা ও মূল্যায়নের দিক দিয়ে আমলের চেয়ে এলমকেই প্রাধান্য দেয়া হয়। কেননা আমলের শুদ্ধতা নির্ভর করে এলমের ওপর। কোনো বিষয়ের ওপর যদি এলম না থাকে তাহলে আমল করবে কীভাবে?
আমাদের দেশে সাধারণ শিক্ষার সঙ্গে যে 'ইসলাম শিক্ষা পাঠ্য করা হয়েছে তাতে কোরআন শুদ্ধ করে শেখারও ভালো ব্যবস্থা নেই। তাই সাধারণ শিক্ষা কারিকুলামের সঙ্গে দ্বীনি শিক্ষার অপরিহার্য অংশের সমন্বয় আজ সময়ের দাবি। আলেম-ওলামার উদ্যোগে সাধারণ জনগণকে দ্বীনি শিক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা একান্ত প্রয়োজন। এ ব্যাপারে যতই কালক্ষেপণ করা হবে পরিস্থিতি ততই আমাদের প্রতিকূলে যাবে। দুর্ভাগ্যবশত ব্রিটিশ প্রবর্তিত প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থার প্রভাবে মুসলমানের সন্তানরাই আজ নিজ ধর্মের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে পরিস্থিতি। আয়ত্তের বাইরে চলে যাওয়া বিচিত্র নয়। এখন যারা আলেম, তালেবে এলম এবং দ্বীনি প্রতিষ্ঠানকে মহব্বত করেন, এটা কিছুটা মুসলিম পারিবারিক রেওয়াজ, কিছুটা ওয়াজ-নসিহত আর বুজুর্গানে দ্বীনের সোহবতের বদৌলতে হচ্ছে। নতুন প্রজন্মের সঙ্গে তো এ বন্ধনটুকুও বজায় রাখা সম্ভব হচ্ছে না। তাই নতুন প্রজন্য দ্বীন থেকে দূরে সরে গিয়ে একসময় যে মসজিদ-মাদরাসায় তালা লাগাবে এ সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়া যায় না। নবী করিম (সা.) বলেছেন, 'আলেমরা হলেন নবীদের উত্তরাধিকারী, নবীরা দিনার ও দিরহামের উত্তরাধিকারী করেননি, তারা উত্তরাধিকারী করেছেন এলমের।' সে হিসেবে আলেমরা হলেন উম্মাহর এলমে দ্বীনের আমানতদার। যাদের আমানত তারা আবার দুই শ্রেণীর। প্রথম শ্রেণী- আমানত সম্পর্কে সচেতন, তারা আলেমদের কাছে মাদরাসা, মসজিদ কিংবা খানকায় আসেন তাদের আমানত নেয়ার জন্য। দ্বিতীয় শ্রেণী- আমানত সম্পর্কে সচেতন নন। এলমের পিপাসা নিয়ে যারা আসেন আলেমরা তো তাদের আমানত পৌছে দেন। কিন্তু যারা আমানত সম্পর্কে সচেতন নন এবং আলেমদের কাছে আমানত নিতে আসেন না, আলেমদের দায়িত্ব তাদেরও আমানত পৌঁছে দেয়া। তা না হলে খেয়ানতকারী হিসেবে হাশরের মাঠে উঠতে হতে পারে। এ সত্ত্বেও নবী করিম (সা.) বলেছেন, 'আমার উম্মতের মধ্যে আলেমদের মর্যাদাই শ্রেষ্ঠ এবং আলেমদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ তারা যারা আমার উম্মতের প্রতি বেশি দয়ালু এবং বেশি সদয়।'
দ্বীনি শিক্ষার আর্থিক খেদমতে যারা নিয়োজিত, বিপদ-আপদে ছায়ার মতো যারা পাশে থাকেন সাধারণত তাদের সন্তানরা দ্বীনি শিক্ষা গ্রহণ করেন না। এলমের দৌলত না তাদের ভাগ্যে জোটে, না তাদের সন্তানসন্ততির। আলেমদের সঙ্গে মহব্বত রাখার কারণে তো তারা ফায়দা পাবে। কেননা নবী করিম (সা.) বলেছেন, 'যে ব্যক্তি এলমে দ্বীনের সঙ্গে এবং আলেমদের সঙ্গে মহব্বত রাখবে তার জীবনের (সগিরা) গোনাহগুলো লেখা হবে না।' তা সত্ত্বেও মাদরাসা মহল্লার লোকদের সত্যিকারের কল্যাণকামী হিসেবে এলমে দ্বীনের গুরুত্ব বুঝিয়ে তাদের দ্বীনি শিক্ষায় আলোকিত করা একান্ত প্রয়োজন। নবী করিম (সা.) বলেছেন, 'মানুষ মানুষকে যা দান করতে পারে, তার মধ্যে এলম দান করার চেয়ে শ্রেষ্ঠ দান আর নেই।' বয়স্কদের মধ্যে অনেকেই এলমে দ্বীন শিক্ষা করতে লজ্জাবোধ করেন। অথচ অধিকাংশ সাহাবা কেরাম বয়স্ক অবস্থায়ই দ্বীনি জ্ঞান হাসিল করেছেন। আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন 'যে ব্যক্তি বাল্যকালে এলম শিক্ষা করেনি, পরে বয়স্ক হয়ে এলম শিক্ষায় আত্মনিয়োগ করেছে, পরে (সে অবস্থায়ই) মৃত্যুবরণ করেছে, সে শহীদের মর্যাদা পাবে।' অন্য হাদিসে এসেছে, 'আল্লাহর কাছে এলমে দ্বীন অন্বেষণ করার মর্তবা নামাজ, রোজা, হজ এবং আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা অপেক্ষাও শ্রেষ্ঠ।' তাই প্রত্যেক মসজিদ-মাদরাসা থেকে বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে ফরজে আইন শিক্ষা দেয়ার কর্মসূচি নিয়ে এখনই মাঠে নামা দরকার। জনসাধারণকে দ্বীনি শিক্ষা দিতে আমাদের তেমন কোনো বাজেটেরও প্রয়োজন নেই, প্রয়োজন শুধু সদিচ্ছার। মসজিদ-মাদরাসার আলেম ও তালেবে এলেমরা প্রতিদিন কিছু সময় এ কাজে ব্যয় করলে, জনগণকে দ্বীনি শিক্ষা দিতে পারলে অচিরেই দেশে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। এলমের নূর দ্বারা জাহালতের অমানিশা দূর হবে, জীবন ফিরে পাবে সিরাতুল মুস্তাকিমের ধারা, সমাজ হবে আলোকিত- এটাই প্রত্যাশা।