Published by Ali Azam
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, 'যিনি তোমাদের জন্য পৃথিবীকে করেছেন বিছানা এবং তাতে করে দিয়েছেন তোমাদের চলার পথ। তিনি আকাশ থেকে বারিবর্ষণ করেন এবং আমি তদ্দ্বারা বিভিন্ন উদ্ভিদ উৎপন্ন করি। তোমরা আহার করো ও তোমাদের গবাদি পশু চরাও; নিশ্চয় এতে রয়েছে নিদর্শন বিবেকসম্পন্নদের জন্য।' (সূরা তুহা: ৫৩-৫৪)। আমরা দেখব, বৃষ্টিবর্ষণের মাধ্যমে কীরূপে বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ উৎপন্ন হয়? সেগুলো আহার করা এবং গবাদি পশু চরানোর মধ্যে বিবেকসম্পন্নদের জন্য কী শিক্ষণীয় নিদর্শন আছে তাও গবেষণার দৃষ্টিতে খুঁজে বের করার চেষ্টা করব। গ্রীষ্মকালে প্রচণ্ড খরায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যায়। গাছের মূলরোম মাটি থেকে খাদ্যরস সংগ্রহ করতে পারে না। বাতাসেও জলীয়বাষ্পের পরিমাণ কমে যাওয়ায় সবুজ পাতা সূর্যালোকের উপস্থিতিতে সালোক সংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করতে পারে না। খাদ্য না পেয়ে পাতা ধীরে ধীরে শুকিয়ে যায় এবং বাতাস এলেই ঝরে পড়ে। শুকনো আবহাওয়ায় এমনও হয় যে, প্রচণ্ড বাতাসে গাছের ডালপালা ভাঙতে থাকে। অনেক সময় গাছও মরে যায়।
গ্রীষ্মের প্রচণ্ড তাপদাহের সময় দয়ালু আল্লাহ তাঁর অসীম করুণার প্রকাশ ঘটান, আকাশ থেকে বৃষ্টিবর্ষণ করেন। বৃষ্টির পানি ভূস্তরের উপরিভাগ থেকে আস্তে আস্তে মাটির রন্দ্রে রন্ধ্রে পৌঁছে নিম্নাঞ্চলে চলে যায়। বায়ুমণ্ডলে যে নাইট্রোজেন রয়েছে তা থেকে বিদ্যুৎচমক দ্বারা নাইট্রেট লবণ তৈরি হয়। সে নাইট্রেট লবণ বৃষ্টিপাতের সঙ্গে মিশে মাটিতে গিয়ে উদ্ভিদের সার হিসেবে কাজ করে। মাটি থেকে শোষণ প্রক্রিয়ায় বীজ তার আবরণের মাধ্যমে পানি শুষে নেয়, বীজে অঙ্কুরোদগম হয়। বীজ তার প্রাণশক্তিকে পুনঃসঞ্জীবিত ও সক্রিয় করে। নতুন অঙ্কুরিত চারার প্রথম অংশ হচ্ছে সদ্য গজানো মূল যা মাটিতে প্রবেশ করে। উদ্ভিদের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান মূল দ্বারা সেখান থেকে শোষিত হয়ে থাকে। দ্বিতীয় অংশ অর্থাৎ কাণ্ড ধীরে ধীরে উপরে উঠে ডালপালা, পত্রপল্লব ছড়িয়ে সবুজ, সতেজ ও ফুলে- ফলে সুশোভিত হয়। এভাবে প্রাণ ফিরে পায় শুষ্ক বসুন্ধরা। যেসব উদ্ভিদের পুনরুজ্জীবন বীজ ছাড়া ঘটে, যেমন বেশ কিছু ঘাস। এদের ভূগর্ভস্থ স্থায়ী অঙ্গই বীজের ভূমিকা পালন করে। বৃষ্টির পর এদের স্থায়ী অঙ্গ সেভাবে কাজ করে, যেভাবে কাজ করে বীজ। মাটিতে বৃষ্টি পতনের ভৌত প্রভাবেও কিছু বীজ মাটির উপরের স্তরে চলে আসে। এখানে প্রচুর অক্সিজেন পেয়ে অঙ্কুরোদগম শুরু করে। এভাবে এত দিনের শুদ্ধ মাটিতে অসংখ্য নতুন চারাগাছ গজিয়ে ওঠে। মাটির উপরে এসে গাছের কাণ্ড মজবুত হয়, তা থেকে ডালপালা জন্মায়। অপর অংশ মাটির নিচের দিকে গিয়ে গাছের খাদ্য জোগায়। কান্ড ও শাখা-প্রশাখায় সবুজ পাতা জন্মাবার পর তা সালোক সংশ্লেষণ দ্বারা বাতাস থেকে তার খাদ্য কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস সংগ্রহ করে ও অক্সিজেন ছাড়ে। সেই অক্সিজেন গ্যাস মানবজাতি বেঁচে থাকার জন্য শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করে। প্রকৃতিতে এভাবেই উদ্ভিদ ও মানুষের বিনিময় প্রক্রিয়া চলতে থাকে। এভাবেই বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেন ও কার্বন ডাই- অক্সাইডের সঠিক অনুপাত রক্ষিত আছে।
গাছপালা বড় হয়ে এক পর্যায়ে বন- জঙ্গল গড়ে তোলে, যা জীবজন্তুর জন্য আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এ সবুজ চারণভূমিতে গরু-মহিষ, ছাগল, ভেড়া, হরিণ ইত্যাদি পালে পালে বিচরণ করতে থাকে এবং উদ্ভিদের কাছ থেকে নিজেদের খাদ্যের প্রয়োজন মেটায়। তাই দেখা যায় যে, বৃষ্টির মাধ্যমে মহান আল্লাহ উদ্ভিদ উৎপন্ন করেন। সময় মতো বৃষ্টি না হলে ভূপৃষ্ঠে কোনো উদ্ভিদ জন্ম নিত না, পৃথিবী মরুভূমিতে পরিণত হতো। প্রাণিকুল যে খাবার থেকে পায় জীবনীশক্তি, বেঁচে থাকার প্রেরণা, সে খাবার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আসে উদ্ভিদ থেকে। তাই উদ্ভিদের ওপর নির্ভরশীল প্রাণিজগতও ভূপৃষ্ঠে টিকে থাকত না, যদি উদ্ভিদ না থাকত। বিবেকবান মানুষ ব্যতীত কেউ তা বুঝবে না।
অতএব আল্লাহর অফুরান নেয়ামতের অগণিত শোকর।